expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>
চলছে । চলবে । অবিরাম...

অন্যরকম ভালোবাসা


সাধারণ দুটি জীবনের অসাধারণ আবেগের অনুভূতি। হয়ত দু'জন দুজনের জন্যই অপেক্ষা করছিল। এটি কোন প্রেমের গল্প নয়। এ গল্প আবেগের, অনুভুতির। সৃষ্টিকর্তা যে মানুষকে অসাধারণ কিছু পুরষ্কার দেন তা হয়ত তবাস্মি আর অনিমেষ পেয়ে গেছে। তা হল দু'জনের জন্য আবেগের অনুভূতি। এ আবেগ প্রেমের নয়, বন্ধুত্বের।

সাধারণ মেয়ের মতই তবাস্মির জীবন। সবই আছে তবুও নিঃসঙ্গ। চারিদিকে মানুষের ভিড়ে একা হয়ে যেত। অনুভূতিগুলো ভাগ করে নেওয়ার কেউ ছিল না। বান্ধবীদের অবহেলায় প্রায়ই কাঁদত,অভিমান হত খুব। কেন অন্যদের মত তার বন্ধু নেই? সৃষ্টিকর্তা কাছে প্রার্থনা করে প্রায়ই রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে কাউকে চাইত যে তাকে বুঝবে,তার বন্ধু হবে। এভাবে কত রাত যে কেটেছে......

অনিমেষও সাধারণ,তবে তবাস্মির মত নিঃসঙ্গ নয়। বন্ধু ছিল তবে কোনো প্রিয় বন্ধু ছিল না। আসলে তবাস্মিকে পাওয়ার আগ পর্যন্ত সে প্রকৃত বন্ধুত্ব সম্পর্কে জানতই না। তাকে পেয়ে সে বুঝেছে যে তার আগের বন্ধুরা কেউই তার সাথে প্রকৃত বন্ধুর মত আচারণ করেনি। শান্ত প্রকৃতির অনিমেষ,খুব বেশি দূরন্ত নয় তবে মাঝে মাঝে চঞ্চল হয়ে ওঠে। এই হল অনিমেষের পরিচয়।

এবার আসা যাক আসল গল্পে। সকলের অবহেলা মুখবুজে সহ্য করতে করতে যখন তবাস্মি একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছিল। বন্ধুত্বের উপর যখন বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল তখনই তার পরিচয় হয় অনিমেষের সাথে। সাধারণ বন্ধুর মতই তাদের জীবন চলছিল। কথাবার্তা,গল্প...অনেক গল্প চলতে থাকে। অনিমেষের খুব ভাল লাগত তবাস্মির সাথে গল্প করতে,সবসময় তার খোঁজ নিত। তবাস্মির সকল সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করত ও তা সমাধান করে দিত। তবাস্মিকে তার মনের সব কথা বলত। একসময় তবাস্মি বুঝতে পারল যে অনিমেষ তাকে খুব ভাল বোঝে। অনেক দুঃখের কথা তবাস্মি না বললেও অনিমেষ তা সঠিক অনুমান করে ফেলত ও সকল পরিস্থিতিতে তার সাথে থাকত। এভাবেই গড়ে উঠল তাদের বন্ধুত্ব।

তবাস্মি তার নিঃসঙ্গ জীবনে বন্ধু খুঁজে পেল । অনিমেষও তবাস্মিকে পেয়ে তার একাকীত্ব ভুলে গেল । অনিমেষের সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার আগে তবাস্মি ডায়েরী লিখত । তবে এখন আর সে লেখে না কারণ অনিমেষই এখন তার ডায়েরী । প্রতিদিন যা হয় বা তার মনের সব কথা সে অনিমেষকে বলে । অনিমেষও এতে খুবই খুশি হয় । কত হাশি-কান্না,মজা,আবেগ জড়িয়ে আছে তাদের বন্ধুত্বে!! তবাস্মি বলে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা অনিমেষকে তার জীবনে পাঠিয়েছে । অনিমেষ তা শুনে হাসে,নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করে। অনিমেষ ও তবাস্মির কোনো মনের মানুষ নেই। তাই তারা মনে মনে কল্পনা করত কেমন হবে তাদের ভালবাসার মানুষটি! তবাস্মি কল্পনা করত তার রাজকুমারকে নিয়ে! প্রিন্স!! আর অনিমেষের স্বপ্নকন্যা! প্রায়ই দুজন তাদের নিয়ে কল্পনা করত। এ রকম কত্ত মজার স্মৃতি! এভাবেই চলে গেল এক বছর।

ধীরে ধীরে তবাস্মির জন্য অনিমেষের মনে ভাল লাগা সৃষ্টি হতে থাকল। তবাস্মিকে বন্ধুর চেয়ে বেশি ভাবতে শুরু করল। তবে মুখ ফুটে বলতে পারে না। সে ভাবত তার প্রিয় বন্ধুটি যদি তা শুনে মন খারাপ করে বা অভিমান করে!?! ভয় পেত যদি তবাস্মি তাকে ছেড়ে চলে যায়। অনিমেষের এ পরিবর্তন তবাস্মি বুঝতে পারে। স্বপ্নকন্যাকে নিয়ে গল্প করার সময় অনিমেষ যেন আনমনা হয়ে যায়। অনিমেষ তবাস্মির অনুভূতির আরও কাছে চলে যেতে থাকে। তবাস্মি মাঝে মাঝে মন খারাপ করে থাকত যে হয়ত কাউকে সে ভালবাসতে পারবে না। কারণ ভালবাসা কি তা সে বোঝে না।একদিন অনিমেষ বলেই ফেলল-

-জানিস তোর দুঃখ আমার একদম ভাল লাগে না। তোকে খুব ভালবাসতে ইচ্ছা করে।

-মানে?? মজা করছিস??

-না...মানে...মজা না।

প্রায় অপ্রস্তুত হয়েই তবাস্মি বলে,আমাকে ভালবাসিস??’

-হুম.........

-মানে?? কি??!!

-প্লিজ মন খারাপ করিস না তবাস্মি...

-কিন্তু...কিন্তু...কবে থেকে??

-আমি জানি না... তবাস্মি ...আমি......আমি তোকে ভালবাসি...

ইতস্তত করে আবার অনিমেষ বলল-‘আমাকে ভালবাসবি??’

-না............

-হুম...ইটস ওকে...

দু’জন অনেকক্ষণ চুপ। তবাস্মি নিরবতা ভাঙল।

-দেখ, আমি এভাবে কখনো ভাবিনি। তুই শুধু আমার প্রিয় বন্ধু। আর...আর...আমি ভালবাসতে পারি না...

-ইটস ওকে তবাস্মি।আমি কখনো জানতে চাইব না তুই আমাকে কেন ভালবাসিস না। শুধু আমাকে কখনো ছেড়ে যাস না। আমার প্রিয় বন্ধু হয়ে থাকিস, থাকবি তো?

-থাকব......

তবাস্মি তখনো অবাক হয়ে ছিল। তার প্রিয় বন্ধু এখন শুধু প্রিয় বন্ধু নইয়,তাকে ভালবাসে। কেউ এখন তাকে ভালবাসে,বারবার মনে হচ্ছিল তবাস্মির।অন্য কেউ তাকে এ কথা বললে সে হয়ত রাগ করত,তার সাথে কথা বলত না। তবে অনিমেষ তো আলাদা। এত প্রিয় বন্ধুর উপর রাগ করতে পারে না তবাস্মি। তাই তার কাছ থেকে দূরেও যাবে না। তবাস্মির খুব কষ্ট হতে থাকে কারণ তার বন্ধুকে সে ভালবাসে না। বন্ধুর কষ্টে সে কষ্ট পায়। সেদিন রাতে খুব কষ্ট পেয়েছিল তবাস্মি। অনিমেষের কষ্ট সে সহ্য করতে পারে না। ওদিকে অনিমেষ কষ্ট পেলেও খুশি হয় এই ভেবে যে তবাস্মি তার সাথে আগের মতই আছে। একটুও রাগ করে নি বরং তাকে বুঝিয়েছে। এ বন্ধুত্তের ভালবাসা পেয়েই অনেক খুশি অনিমেষ।

এভাবে কয়েক মাস কেটে যায়। অনিমেষ আর তবাস্মির বন্ধুত্তে আরও গভীর হয়। তবাস্মির সব দুঃখ কষ্ট অনিমেষ নিয়ে নেয়। তবাস্মির একটু কষ্ট হলেই অনিমেষ কেঁদে ফেলে আর তবাস্মি অনিমেষের কষ্টে কেঁদে ফেলে। তবাস্মি কখনো অনিমেষকে তার ভালবাসা প্রকাশ করতে বাধা দেয়নি কারণ সে অনিমেষকে কষ্ট দিতে চায়না। অনিমেষ প্রায়ই তবাস্মিকে বলে যে তাকে পেলে সে কিভাবে তাদের ভবিষ্যত সাজাবে। তবাস্মিও আনন্দের সাথে তা শুনে এবং তার কল্পনায় যোগ দেয়। অনিমেষের তাকে নিয়ে সাজানো কল্পনা তার কাছে খুব সুইট লাগে!

এমন না যে তবাস্মি কাউকে ভালবাসে। তবে তবাস্মির পরিবারে সবসময় মা-বাবার পছন্দে বিয়ে করার কথা বলা হয়। তবাস্মিতার মা-বাবাকে খুব ভালবাসে। তাই সে চায় না যে কাউকে ভালবেসে তার মা বাবাকে কষ্ট দিতে।এছাড়াও তার ভয় হয় সে যদি কাউকে ভালবাসে আর তার মা-বাবা মেনে না নেয় তবে সে কিভাবে বাঁচবে। তাই সে ভালবাসা নিয়ে চিন্তা করে না। সে তার প্রিয় বন্ধুকে পেয়েই খুশি। অনিমেষের সঙ্গ তার সব একাকীত্ব ভুলিয়ে দেয়। অনিমেষকে ভালবাসবে-এ কথা ভাবলেই তার মাথা যেন আউলিয়ে যায়!! সকল বাধা তার সামনে চলে আসে। মাঝে মাঝে সে খুব কষ্ট পায়। তবে প্রকৃত অর্থে সে অনিমেষের প্রতি ভালবাসা অনুভব করে না।

অনিমেষ তার বন্ধুত্ব আর ভালবাসা দিয়ে তবাস্মির জীবন ভরিয়ে দিতে চায়। তবে পুরোপুরি ভালবাসা সে প্রকাশ করতে পারে না কারণ সে জানে যে তবাস্মি তাকে শুধু বন্ধুর মতই ভালবাসে। তবুও সে খুশি কারণ তবাস্মি তার ভালবাসা বোঝে,তাকে বিশ্বাস করে,কখনো তাকে কষ্ট দেয় না। তার কষ্ট হয়ে তবাস্মি তার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয় আর সবসময় তার পাশে থাকে। দুজন দুজনকে কখনো ছেড়ে যাবে না। অনিমেষ যতটুকু ভালবাসা প্রকাশ করতে পারে তাতেই খুশি হয়। সে নিজেকে খুব ভাগ্যবান বলে মনে করে কারণ এমন বন্ধু কয়জনই পায়!! এভাবেই অনেক দিন চলতে থাকল। একদিন অনিমেষ তবাস্মিকে বলল,

-তুই কি কখনো আমাকে ভালবাসবি না?

-ভালবাসব......

-কবে?!!!

-বিয়ের পর! বলেই হেসে ফেলে তবাস্মি। আবার বলল, ‘আমাকে বিয়ে
করবি?’

-অবশ্যই করব!

-হুম। যখন সময় আসবে তখন আমার মা-বাবাকে বলিস। তারা যদি মেনে নেন তবে আমার কোন সমস্যা নাই।

-সত্যি???!!

- সত্যি অনিমেষ!

-তাহলে ভবিষ্যতে সময় আসলে আমি তোর মা-বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠাব।

-তবে আমার আরও একটা শর্ত আছে।

-কি?

-আমি যদি অন্য কাউকে ভালবেসে ফেলি??

-ও............হুম.............
..

-তুই খুব কষ্ট পাবি,তাই না রে??

-না রে...তুই খুশি হলেই আমি খুশি...

মনের অজান্তেই তবাস্মির চোখ পানিতে ভরে উঠল।

তবাস্মি মাঝে মাঝে ভাবে যে তার জীবনে বন্ধুর জন্য সে কত প্রার্থনাই না করেছে। সৃষ্টিকর্তা কতটা দয়াময় যে তিঁনি তাকে প্রকৃত বন্ধু দিয়েছেন আর সে বন্ধু তাকে এতটা ভালবাসে যা সে আগে কখনো কল্পনাও করতে পারে নি। অনিমেষ তবাস্মিকে নিয়েই তার ভবিষ্যতের স্বপ্ন সাজায়। সে জানে হয়ত তবাস্মি অন্য কারও হয়ে যেতে পারে তবুও সে তবাস্মিকে ভালবাসে আর ভালবাসবে। তবাস্মিকে ছাড়া কখনো আর কাউকে ভালবাসবে না সে।

মাঝে মাঝে তবাস্মি বলে যে সে তার না হলে অন্য কোনো মেয়ে তার জীবনে আসবে যে তাকে অনেক অনেক ভালবাসবে আর সে তার চেয়েও অনেক ভাল হবে। আবার মাঝে মাঝে সে বলে যে সে নিজেই অনিমেষের জন্য খুব ভাল একজনকে খুঁজে নিয়ে আসবে। এসব কথা শুনে খুব রাগ ও অভিমান হয় অনিমেষের। সে আবেগজড়িত কণ্ঠে বলে- তোকে ছাড়া আমি আর কাউকে চাই না রে...চাইব ও না। আমি শুধু তোর......

বিয়ের বয়স হতে তাদের এখনও অনেক সময় বাকি। পড়াশুনা...এখনওতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি তারা। বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে আরও উচ্চশিক্ষা নিতে নিতে এখনো বিয়ের জন্য ১০/১২ বছর রয়েছে। অনিমেষ কল্পনায় ১০/১২ বছর পর তার কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনে যেখানে শুধু সে আর তবাস্মি। তবাস্মি আর অনিমেষ কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারে না। প্রতিদিন তাদের কথা হয়। যখনই সময় পায় তারা গল্প করে। কত গল্পই না তারা করে......

-তোর বিয়ের পর তোর বর যদি আমার সাথে তোর বন্ধুত্ব পছন্দ না করে?

-উহ! বললেই হলো?? যে আমার প্রিয় বন্ধুকে পছন্দ করবে না তাকে আমি কখনো বিয়ে করব না!

হেসে ফেলে অনিমেষ । -আমি সারাজীবন তোর প্রিয় বন্ধু হয়ে থাকব অনিমেষ;

-জানি রে...এই জন্যই তো আমি বেঁচে আছি...

-আমি অন্য কারো হলে তুই খুব কষ্ট পাবি তাই না অনিমেষ?

-আমি বলেছি তো তোর খুশিতেই আমি খুশি...

-কাঁদবি না তো? দেখ, তুই কাঁদলে কিন্তু আমি কাউকে ভালবাসলেও তোকে বলব না।

-না না! প্লিজ আমাকে বলিস।

-বলবো বলবো...তবে সে যদি আমাকে ভালো না বাসে??

-আমি তোকে সাহায্য করব।

-কি???!!!!! অন্য কাউকে ভালবাসতে তুই আমাকে সাহায্য করবি??!!

-হ্যাঁ...করবই তো। আমি তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড না??

নিশ্চুপ হয়ে যায় তবাস্মি...-তুই কেন আমাকে এত ভালবাসিস?

-আমি তোকে ভালবাসতে ভালবাসি তবাস্মি...।

-আমি অন্য কারও হলে তুই কেন অন্য কাউকে ভালবাসবি না??

-কেন তুই বুঝিস না যে আমি শুধু তোকে ভালবাসি...এমন তো না যে
ভালবা।সা পাওয়ার জন্য আমি মরে যাচ্ছি বা তো কে না পেলে আমি আত্মহত্যা করব... তুই আমার হলে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ হব আর তা না হলে তোর ভালবাসার মানুষের সাথে তুই সুখী থাকলেই আমি খুশী। আমার জীবনটা এভাবেই কেটে যাবে...

তবাস্মির চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়ে আর অনিমেষের এই ভালবাসায় তার মুখে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।

-কাঁদছিস কেন? প্লিজ কাঁদিস না তবাস্মি...

অনিমেষ তার চোখ মুছে দেয়।

-তুই দেখে নিস অনিমেষ...আল্লাহ আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটাবেন
যাতে আমরা দুজনই ভাল থাকি।

-হুম......তাই যেন হয়। তবে অন্য কেঊ তোর জীবনে আসলে তোর উপর
আমার কোন দাবি থাকবে না। তবে ততদিন পর্যন্ত তুই শুধু আমার হয়ে থাকবি...থাকবি তো?

-হ্যাঁ অনিমেষ...আমি শুধু তোর হয়ে থাকব...আমি তুই শুধু আমার...

অনিমেষ হেসে বলে- আর কার??

-শুধু আমার...শুধু আমার......

দুজনই হেসে ফেলে। এভাবেই চলছে তাদের জীবন। অন্য রকম ভালবাসা সৃষ্টি হয়ে গেছে তাদের মাঝে...ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কথা জেনেও তারা তাদের স্বপ্ন বুনে যাচ্ছে...এখন শুধু ১০/১২ বছর পার হবার প্রতীক্ষা...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন