expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>
চলছে । চলবে । অবিরাম...

এক মুঠো স্বপ্নের একটি পকেট আছে.. হিমু নই, আমি নিরবতা...

এক.
দাড়িয়ে আছি একটা বিলবোর্ডের সামনে, জমকালো রঙের বিলবোর্ডটিতে পণ্যের বিজ্ঞাপনে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে একজন লাস্যময়ী হাত বাড়িয়ে আছে, যদিও পণ্যটাকে হাইলাইট করা হয়েছে কেবল একটি স্লোগানের মত বাক্যে - "আপনার সিদ্ধান্ত আপনার, হাসুন মনখুলে" আমি আসলে পণ্যটির সাথে লাস্যময়ীর সম্পর্ক, আর আমার সিদ্ধান্তের সাথে আমার মনখোলা-হাসির সম্পর্ক খুঁজে বের করতে হিমসিম খাচ্ছি, পণ্যটির ক্রেতা আমি নই, তবু হিমসিমের ক্রেতা হতে তো দোষ নেই।

বিকেলটাতে একটা হুহু বাতাস বয়ে যাচ্ছে, বাতাসের সাথে শীত মিশে থাকায় কেমন একটু শীত শীত লাগে, পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাটতে লাগলাম সামনের দিকে, একটু হেসেও দেখলাম আসলেই আমার সিদ্ধান্তের সাথেই আমার হাসির সম্পর্ক আছে কিনা, আছে তবে মেকি হাসির সাথে সম্পর্ক, যেমনটি বিলবোর্ডের লাস্যময়ীর হাসি, সব কিছুই হাসছে তবু চোখটা কেমন যেন গম্ভীর, চোখটা হাসতে ভুলে গেছে 'সিদ্ধান্তের' ভাবনা ভাবতে গিয়ে। হাসতে গেলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা কতটা জরুরী? হুমম..

চোখের ভাষা শিক্ষা একটা কোর্স চালু করা উচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, ডিপ্লোমা কোর্সও হতে পারে, আই.ই.আর এর অন্তর্ভুক্ত 'চোখ ভাষা শিক্ষা' চোখ দেখে মানুষের মানসিক আচরনের আসল-নকল খুঁজে বের করা। ভাগ্যিস চোখ শব্দ করতে পারে না, পারলে মনের ভাষা প্রকাশে, মুখের চেয়ে চোখই অগ্রজ হতো। তখন কেউ মুখকে বিশ্বাস করতো না চোখকে বিশ্বাস করতো আর মুখটি হয়ে যেতো অকেজো। থাক 'চোখ ভাষা শিক্ষা' কোর্সের কোন দরকার নেই, তাহলে একটা বড় অংশের মানুষই নির্বাক হয়ে যাবে। ধুর কি সব ভাবছি! নিজেকে একটা শক্ত ঝাঁকি দিলাম।

দুই.
সকাল থেকে হিমুটার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি কম করে হলেও পাঁচবার, এই হিমুটা এক হিমু নাম পেয়েই হিমু হয়ে গেছে, আমি হিমশিম এবং হোঁচট দুটোই খেয়েছি ওকে এটা বোঝাতে গিয়ে যে, বাস্তবতা লেখকের হাতে কখনোই ছিলনা, যেমনটি বাস্তবের আমরা নই, লেখকরা কেবল কল্পনার চরিত্রকে বাস্তবতায় ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে কল্পনা আর বাস্তবতা গুলিয়ে ফেলে, যেমনটি হিমুকে গুলিয়ে ফেলেছে উপন্যাসের হিমু। দুইটা কি তিনটা হিমু-ইক বই পড়ে কত লোক যে হলুদ পাঞ্জাবী আর খালি পায়ে রাস্তায় নেমে যায়, পরে দুই দিন হিমু থাকার পর খায়েশটা চলে যায় আবার ফিরে আসে নিত্য-নৈমিত্তিক জীবনে, ফিরে এসে বেশ ক'দিন একটু উদাস থাকে পরে আবার স্বাভাবিক। সবক'টি বই পড়লেও হিমু হওয়া আমার জন্য একটা হাস্যকর ব্যাপার। গল্পের প্লাটফর্মে ঘোড়ার পাখা থাকে, আলাদিনের দৈত্য থাকে আর হিমুর থাকে পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবী আর বাই-ডিফল্ট খামখেয়ালীপনা তাতেই মুগ্ধ হয়ে বাস্তবের হিমুরা গল্পের প্লাটফর্মে পা বাড়ায়। আমার পকেটে আমি স্বপ্ন ভরেছি পকেট আমার থাকতেই হবে।

হিমু আমার অন্যতম একটা ফাঁকা-দোস্ত, অনেকটা গণিতের ফাঁকা-সেট এর মতো, ফাঁকা সেটের অস্তিত্ব আছে কিন্তু ভ্যালু গণনা করার মতো নয় এমন শুন্য স্থান। হিমুও আমার জীবনে একটা অস্তিত্বে আছে কিন্তু ওর ভ্যালু গণনার মতো নয়, অমূল্য বলবো নাকি মূল্যহীন বলবো এটা নিয়ে একটু কনফুশনে আছি, ও আমার জীবনে একটা মূল্যহীন-অমূল্য জায়গা দখল করে আছে। ওকে খোঁজার মূল কারন হলো ওর সাথে গল্প করা কিছুক্ষন, হিমুর সাথে গল্প করার ফ্লেভারটা একটু অন্যরকম, হিমু হতে পেরে ও হয়তো কিছু পাচ্ছে না, খামখেয়ালীপনা ছাড়া; কিন্তু চারপাশের মানুষরা কিছু বিনোদন পাচ্ছে আর আমি পাচ্ছি মন ভালো করার উপকরণ। ওর সাথে গল্প করলে প্রথমেই ও একটা হাসি দিবে তারপর কিছুটা অপ্রস্তুত হবে, যা গল্পের হিমুর নেই তারপর আমার হাত দুটি টেনে নিয়ে এক জায়গায় বসে পড়ে সারাদিন কি কি করল কিভাবে হিমু-ইক কর্মকান্ড চালালো তার নিঁখুত বর্ণনা দেবে তারপর গল্প শেষে বাড়ির পথে, গল্পের হিমুর বাপ নেই বাস্তবের এই হিমুর আছে এবং প্রচন্ড রাগীও বটে তাই হিমুর হিমু হয়ে ওঠার প্রতিবন্ধকতা অনেক।

তিন.
সন্ধ্যা হতে চলল, সূর্য্যটা এ সময় লাল রঙ মাখাতে ভালবাসে চারপাশে, এ গোধূলী সময়ে চারপাশে মোহনীয়তা ভর করে, সব কিছু মায়ায় আচ্ছন্ন হবার প্রয়াসে ব্যস্ত হয়ে যায় যেন, নিজেকে মায়াময় ভাবতে ভাল লাগে। হিমুকে খোঁজার প্লান বাদ দিয়ে নদীর পাড়ে বসার একটা নিঁখুত পরিকল্পনা মনে গেঁথে নদীর দিকেই আগাতে লাগলাম, এ সময় সন্ধ্যার সাথে নদীকে সবাই বিদায় জানিয়ে সব গল্পগুলো পিছনে ফেলে নিজের যাপিত জীবনে ফিরে যায়। বসে পড়লাম সবুজের উপর। নদীর ঠিক মাঝ খানে একটি নৌকা এক টুকরো পিদিম জালিয়ে পানিতে দুলছে, অসাধারণ দৃশ্য গুলোর একটি, চারপাশে আলো আর আধারী খেলা জমাতে মেতে উঠেছে আমি একা দর্শক যেন।

চারপাশের নিরবতা আমাকে গ্রাস করুক, শুভ সন্ধ্যা।

চার.
আমার পদ-যাত্রা সন্ধ্যার নিয়ন আলোয় হিমু-ইক পদচ্ছাপ আঁকে, হিমু হতে ইচ্ছে করে। হিমু সেদিন বলেছিল, "হিমু হবি? চল তুই আমি মিলে হিমু-হিমু" আমি বলেছিলাম, "হিমুদের পকেট থাকতে নেই"

আমি কোনদিন হিমু হব না, আমার আছে পকেট।

পাচ.

দিনগুলি ধীরে ধীরে আমাকে পুড়ে ফেলছে বদ্ধ খাঁচায়, বদ্ধ খাঁচায় আমার যাপিত জীবন নিরিবিলি, নীল আকাশের ব্যপ্তি শুধু দু'পাল্লার খোলা জানালায়, তারপরও ঐ টুকু আকাশের বেশ কিছু অংশ জুড়ে পাশের বাড়ির 'গাজী ট্যাংক'টি। বাকীটুকু আমার আকাশ। নিরবতা অনুলিপিতে কদাচিৎ কাঠঠোকরার ঠক ঠক, ঠক ঠক বাকীটুকু আমার আমি। আমার নামের সাথে এ সব কিছুর-ই মিল।

আমি নিরব।

বয়ে চলা জীবনের তরীতে ভাসিয়ে চলি এক মুঠো স্বপ্ন-ফসল কে পুঁজি করে। দাড় বাইতে যতটুকু পানি সরাতে হয় তার থেকে ঢের বেশি পানি আমার নৌকার তলায় উঠছে নামছে। নিঃসঙ্গতা নয় নির্লিপ্ততা, বাস্তবতা নয় নৌকার বৈঠা।

ছয়.

হিমুর ভাবখানা অতি আমোদী, যেন সে খুব সুখে আছে, দু'বিঘা জমির বদলে বিশ্ব-সংসার তার হাতের মুঠোয় টাইপের আমোদী। আমার চোখের ভাষা পড়ার সব টুকু রিসার্চ হিমুর উপর প্রয়োগ করে ওর সব টুকু ভাষা অবলোকনের নিয়ত মানসিক চেষ্টা বহাল তবিয়তে, তথ্য সাজাতে ব্যস্ত। ওর চোখে বলছে এখন ও চিন্তা করছে ওর চেহারা বলছে 'সব কিছু ওকে বস, আমি পুরা খাল্লাস" ওর চিন্তার উৎসটা যে কম গুরুত্বপূর্ন না সেটা বুঝতে বেশি বাকী রইল না। ওর কি হয়েছে জিজ্ঞেস করার ইচ্ছা কখনো জাগে না, কিছু কিছু হিমু না হয় হিমুই থাক, অনেক সুখে আছে বাস্তবতা কে লাথি মেরে, বাস্তবতাই অভিনয়, হিমুরা অভিনীত নয় অভিনেতা।

হিমুরা বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে চলে, নিরবরা পাশ কাটায় বাস্তবতা আর হিমুদের, নিরবদের জন্য পড়ে থাকে শুধুই নিরবতা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন